তারেক মিয়া
আজ থেকে প্রায় ত্রিশ থেকে চল্লিশ বছর আগেরকার সময়ের কথা। তখনো ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ ছিলনা। আর আজকের দিনের মত এত সুন্দর সুন্দর ইটের অট্টালিকা কিংবা সামান্য টিনের ঘর পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া দুষ্কর ব্যাপার ছিল।পরিবেশটাও ছিলো এরকম এযেন ভয়ংকর এক ভুতের রাজ্য। কোথাও কোনো জনমানব খুঁজে পাওয়া যেত না। দিনে দুপুরে এমন অনেক জায়গা ছিল যে জায়গাগুলো কে আমাজান বনের প্রতিচ্ছবি হিসেবে চোখ বুজে ধরে নেওয়া যায়।
এ রকমই এক প্রান্তিক জনপদের বাসিন্দা আবুল মিয়া। সে গ্রামের একজন আদর্শবান মুরুব্বি । লেখাপড়া জানা লোকের সংখ্যা অতন্ত নগণ্য। তবে নূন্যতম শিক্ষা বলতে যা বোঝায় তা আবুল মিয়ার ছিলো। নিতান্তই অশিক্ষিত এক কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজের বাসিন্দা আবুল মিয়ার দুই ছেলে এবং এক মেয়ে ছিল।তিন সন্তানের মধ্যে মেয়েটিই সবার ছোট । দুর্ভাগ্যবশত তার দ্বিতীয় ছেলেটা পনের বছর বয়সেই মারা যায়। আর আবুল মিয়ার বউ ছোট মেয়েটা জন্ম দিতে গিয়ে বেচারী রক্তশূন্যতায় অল্প বয়সেই মারা যায়। বউটাকে অনেক ভালোবেসে ছিল সে।
যখন আবুল মিয়ার দ্বিতীয় লেছেটা মারা যায় তখনকার কথা। ছেলেকে কবর দিয়ে বাড়ি ফিরে এসেছে। সারাদিন আহার নেই। প্রতিবেশী অনেকেই খাবার নিয়ে এসেছে। তার বিধবা বোনটা বলছিল “ভাইজান মন খরাপ করবেন না, যা হয় ভালোর জন্যই হয়। হয়ত এটাই আপনার কপালে ছিলো। বাবিও আপনাকে ছেড়ে চলে গেলো আর আজ ছেলেটাও। সবই উপর ওয়ালার ইচ্ছা। এখন আসেন কয়টা খাবেন। ” বোনের আবদার ফেলতে পারেনি আবুল । সমান্য কয়টা ভাত মুখে নিয়েই ক্ষুধার যন্ত্রণা দূর হয়ে যায় তার। পানি পান করেই রাতের আহার পর্ব শেষ হয় আবুল মিয়ার।
পুত্র বিয়োগের শোকে কাতর একজন পিতা কি পারে চোখের পানি মুছতে মুছতে বিছানায় দুচোখ এক করতে? আবুল মিয়াও পারেনি। দু চার দিন অতিবাহিত হয়ে গেলে প্রকৃতির ধরাবাঁধা নিয়মে স্ববিরোধী হওয়া স্বত্বেও মানুষ প্রিয়জন হারানোর কষ্ট ভুলে যেতে শুরু করে। সবকিছুই স্বভাবিক হয়ে যায় তখন। তার ক্ষেত্রে ও এর ব্যতিক্রম হলো না। এক ছেলে আর এক মেয়েকে নিয়ে আবুল মিয়ার সংসার আগের মতই চলছে।
সেদিন মঙ্গলবার। বিছানায় পিঠ পরতে না পরতেই দুচোখ বন্ধ হয়ে আসে তার। স্বপ্ন নাকি বাস্তব বুজে উঠতে পারলো না আবুল। সে দেখতে পেলো তার মাটির ঘরের চারপাশে কিছু পঁচা লাশের আর্তনাদ। কিযে বীভৎস সেই চিৎকার। দুর্গন্ধে চারদিক বিষাক্ত হয়ে যাচ্ছে। সাদা কাপড় বাতাসে মিলিয়ে যাচ্ছে। চিৎকার করে কে যেনো বলছে বাবা আমি তোমার কাশেম। এ কোন কাশেম, আবুল মিয়ার ছেলে নয়তো? গ্রামে প্রচলিত একটি কথা আছে কেউ বিষ কিংবা ফাঁসি নিয়ে মারা গেলে তার লাশ চারদিকে ঘুরাঘুরি করে। কাশেম নিজে বিষ খেয়ে মরে ছিল। তাহলে এ কাশেম নয়তো?
লেখকঃ সৌদি আরব প্রবাসী। নিজ জেলাঃ নরসিংদী।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।